মা-বাবাকে খুন করার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশী রহমান এখন কনডেম সেলে। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পর তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মহিলা কনডেম সেলে স্থানান্তর করা হয়। একই সঙ্গে তার পোশাকেও পরিবর্তন এসেছে। তাকে দেওয়া হয়েছে কয়েদিদের নির্ধারিত সাদার ওপর খয়েরি রঙের ডোরা কাটা শাড়ি। কারা সূত্র জানায়, কনডেম সেলের ভিতর প্রথম রাতটি তার কেটেছে কান্নাকাটি করে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নেসার আহমেদ জানান, ঐশী আগে ছিল হাজতি। রায় ঘোষণার পর সে কয়েদি। তাকে মহিলা কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। সেখানে আরও একজন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত মহিলা রয়েছেন। কারাগার সূত্র জানায়, আদালত থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফেরত আনার পর কারও সঙ্গে কথা বলেনি ঐশী। তাকে কনডেম সেলে স্থানান্তরের পর থেকেই কান্নাকাটি করতে থাকে। খাবার দেওয়া হলেও তা মুখে নেয়নি। তবে রাতে সে কিছু খেয়েছিল। সূত্র জানায়, সন্ধ্যায় ঐশী হাউমাউ করে কান্নাকাটি করে। সারা রাত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছে। তবে গতকাল থেকে সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। খাবার খেয়েছে আগের মতোই। পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক সাঈদ আহমেদ বৃহস্পতিবার জনাকীর্ণ আদালতে ঐশী রহমানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। রায়ে এ মামলার আসামি ঐশীর বন্ধু আসাদুজ্জামান জনিকে বেকসুর খালাস এবং মিজানুর রহমান জনিকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর চামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন গৃহকর্মী সুমিকে নিয়ে রমনা থানায় আÍসমর্পণ করে ঐশী। ঐশী জানায়, সে তার মা-বাবাকে খুন করেছে। তার দুই বন্ধু জনি ও রনি তাকে সাহায্য করেছে। ওই হত্যাকাণ্ডের পরদিন নিহত মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই মশিউর রহমান রুবেল পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বহুল আলোচিত পুলিশ দম্পত্তি মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার অভিযোগে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের কনডেম সেলে অন্তরীণ রয়েছে ডাবল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশী রহমান। এখন কারাগারে সে শুধু কান্নাকাটি করছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই রায় কার্যকরের পর থেকে তার মানসিক অবস্থা অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছে। গেল বৃহস্পতিবার কারাগারে ঐশীকে দেখতে গিয়েছিলেন তার চাচা মশিউর রহমান রুবেল। সেসময় সে তার চাচার কাছে অনেক কান্নাকাটি করে এবং তার কাছে কাগজ কলম চেয়েছে কিছু লেখার জন্য। গত সোমবার রাতে মুঠোফোনে আলাপ হয় ঐশীর চাচা মশিউর রহমান রুবেলের সাথে। সে সময় তিনি বলেন, ঐশী কখন কারাগার থেকে বের হবে তা জানতে চেয়েছে। কারাগারে আমি ঐশীকে দেখতে গিয়ে একটা গল্পের বই দিয়েছিলাম। ওই বই সে অনেকটাই পড়ে ফেলেছে। এখন সে আমার কাছে কাগজ কলম ছেয়েছে। কিছু একটা লিখতে চাই ঐশী। আমি তার জন্য প্রিজন ক্যান্টিনে টাকা দিয়েছি কিছু কিনে খাওয়ার জন্য। কারাগারে গেলে ছোটভাই ওহীকে দেখার জন্য ঐশী কান্নাকাটি করে। কিন্তু ওহীর পরীক্ষা থাকায় তাকে সেখানে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, রায়ের নকল তোলা হয়েছে। আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপও শেষ। হয়ত আগামী সপ্তাহে উচ্চ আদালতে আপিলের জন্য যাব। ঐশীর ফাঁসির রায়ের পর থেকে তার দাদীর শারীরিক অবস্থাও বেশ খারাপ হয়ে গেছে বলেও তিনি জানান। জানতে চাইলে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার সালমা বেগম এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। চলতি বছরের ১২ অক্টোবর পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার দায়ে তাদের মেয়ে ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এ রকম আরও খবর… মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ঐশীর ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে The post কারাগারের কনডেম সেলে কি লিখতে চায় আলোচিত সেই ঐশী ? দুইদিন পর ফাঁসিতে ঝুলবে অথচ কারাগারে একি করছে ঐশি !! রাজধানীর চামেলীবাগে স্ত্রীসহ পুলিশের পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান হত্যা মামলায় তাঁদের মেয়ে ঐশী রহমানকে মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। আজ সোমবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ে এই আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম। ঐশীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী। ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট চামেলীবাগের বাসা থেকে পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রীর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন মাহফুজের ভাই মশিউর রহমান ওই ঘটনায় পল্টন থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই দিনই ঐশী পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করেন। এই মামলায় ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায় দেন। রায়ে ঐশীকে মৃত্যুদণ্ড ও তাঁর বন্ধু মিজানুর রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই বছরের ১৯ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টে আসে। পরে তা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়। ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন ঐশী। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ মামলার পেপারবুক (মামলাবৃত্তান্ত) প্রস্তুতের পর ওই বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য আসে। গত ১২ মার্চ এসবের ওপর শুনানি শুরু হয়, ৭ মে শুনানি শেষ হয়।
Comments (0)